
স্টাফ রিপোর্টার, সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের পাটলাই নদীতে ‘নাব্যচিহ্ন বসানো’র নামে চলছে প্রকাশ্য চাঁদাবাজি। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মন্দিয়াতা গ্রামের মৌলা মিয়ার ছেলে আক্তার হোসেন ও তার সহযোগী বকুল মিয়া এই অবৈধ চক্রের মূল হোতা হিসেবে কাজ করছে।
নৌযান মালিক ও মাঝিদের অভিযোগ নদীপথে নৌযান চলাচলের নিরাপত্তার অজুহাতে জোরপূর্বক টাকা আদায় করা হচ্ছে। অথচ নদীতে কোথাও বাঁশ, বয়া বা কোনো নাব্যচিহ্ন বসানো হয়নি।টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালেই নৌযান আটকে দেওয়া, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং চলাচলে বাধা দেওয়া হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ জেলা ট্রলার বাল্কহেড শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন,মন্দিয়াতা ও কামালপুর এলাকায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই সুহেব মিয়ার ছত্রছায়ায় এই চাঁদাবাজি চলছে। শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন হলে আমরা নীরব থাকতে পারি না।সম্প্রতি এক পরিবহন নৌকায় চাঁদা তুলতে আসলে আমি গোপনে ভিডিও করে ফেসবুকে প্রকাশ করেছি। প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
স্থানীয় এক নৌচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,সরকারের নির্ধারিত টোল নিয়মিত দিই। তারপরও আক্তার ও বকুল নাব্যচিহ্নের নামে টাকা তোলে। এটা স্পষ্ট চাঁদাবাজি। কোনো নিয়ম নেই, আইন নেই।
তবে এ ব্যাপারে অভিযুক্ত বকুল মিয়া নিজেই চাঁদাবাজির কথা স্বীকার করে বলেন,আমরা টাকা তুলছি। কিন্তু এই টাকা আমরা একা খাই না—সুহেব মিয়া আমাদের কাছ থেকে ৫০–৬০ হাজার টাকা নিয়েছে আমরা সুহেব মিয়ার নির্দেশেই টাকা তুলি। শুক্রবার পর্যন্ত আমাদের সময় ছিল,তারপরও টাকা তোলা বন্ধ করে দিয়েছি।একই কথা স্বীকার করেন আক্তার হোসেন,উনি বলেন আমি দুই মাস আগেই টাকা তুলা বন্ধ করে দিছি। আমর সুহেব মিয়ার নির্দেশে টাকা তুলেছি। উনিই আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে।
তবে ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই সুহেব মিয়া অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা বলেন,আমি বিষয়টি কিছুই জানি না। বাগলী ছড়ায় সমিতির নির্দেশে নৌকার নৌশৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাজ করে নৌকা প্রতি সামান্য টাকা নিয়েছি।স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কালাম বলেন সুহেব এসবের সাথে জড়িত না,অহেতুক ওরা তার নাম বলছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ এই পুরো সিন্ডিকেটের পেছনে রয়েছে একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠীর আশ্রয়–প্রশ্রয়, যার কারণে দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসন নীরব এবং চাঁদাবাজ চক্র বেপরোয়াভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে,বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত সরকারিভাবে টোল আদায় করে। তাই নাব্যচিহ্ন স্থাপন ও নৌপথ নিরাপত্তার দায়িত্ব একমাত্র সংস্থাটির। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর এ নামে টাকা আদায় করা বাংলাদেশ নৌপরিবহন আইন–২০১৭ এবং ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩৮৪ ধারা অনুযায়ী চাঁদাবাজি ও রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ।
স্থানীয় নৌযান মালিক ব্যবসায়ীরা বলেন,নদীকে ঘিরে দখলদার ও চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট সক্রিয়। সরকারি রাজস্ব ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা না নিলে নদীপথ অচল হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও আলাপ করা সম্ভব হয়নি।
পাটলাই নদীতে‘নাব্যচিহ্ন’নামের জুজু তুলে চাঁদাবাজির এই অপতৎপরতা এখন শুধু স্থানীয় সংকট নয় রাষ্ট্রীয় রাজস্ব,নৌনিরাপত্তা ও আইনের শাসনের জন্য গুরুতর হুমকি।



























