
আতিক ফারুকী,নিজস্ব প্রতিবেদক :
সুনামগঞ্জ জেলার নবগঠিত উপজেলা মধ্যনগরকে রেল যোগাযোগের আওতায় আনতে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জের মধ্যনগর পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণের দাবি জোরালো হচ্ছে। পর্যটন বিকাশ, কৃষিপণ্য পরিবহন, হাওরাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সাধারণ মানুষের যাতায়াত সুবিধার কথা বিবেচনায় স্থানীয়রা এই দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন।
বর্তমানে মোহনগঞ্জ রেলস্টেশনই হাওরাঞ্চলের শেষ গন্তব্য। এখান থেকে সুনামগঞ্জের মধ্যনগর পর্যন্ত প্রায় ৩০-৩৫ কিলোমিটার রেললাইন সম্প্রসারণ করা হলে পুরো ধর্মপাশা, মধ্যনগর ও পার্শ্ববর্তী বিস্তীর্ণ হাওরাঞ্চল রেল যোগাযোগে যুক্ত হবে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক ও ব্যবসায়ীদের মতে, বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট টাঙ্গুয়ার হাওর সুনামগঞ্জের তাহেরপুর ও মধ্যনগর এলাকায় অবস্থিত। রেললাইন সম্প্রসারণ হলে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা সরাসরি মধ্যনগরে পৌঁছাতে পারবেন। এতে হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মুক্ত আকাশে পানকৌড়ির ঝাঁক, ঐতিহ্যবাহী মন্দির ও ধর্মীয় উৎসব ঘিরে নতুনভাবে পর্যটন শিল্প বিকশিত হবে।
ফারুকনগর গ্রামের কৃষক খসরুজ্জামান বলেন, “রেল যোগাযোগ হলে কৃষিপণ্য পরিবহন সহজ হবে। বাজার ব্যবস্থায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”
অজিৎ স্মৃতি পাঠাগারের প্রতুষ্ঠাতা অসীম সরকার বলেন, “টাঙ্গুয়ার হাওরের বড় অংশ মধ্যনগরে অবস্থিত। রেল যোগাযোগ থাকলে সহজেই রাজধানী থেকে পর্যটক ও ব্যবসায়ীরা আসতে পারবেন। কৃষিপণ্য ও মৎস্যসম্পদ পরিবহন সহজ হবে। দুর্নীতিমুক্তভাবে কাজ করলে হাওরাঞ্চলেও রেললাইন বাস্তবায়ন সম্ভব।”
মধ্যনগর উপজেলার বাসিন্দা সহকারী লোকোমোটিভ মাস্টার তৌহিদুল মুরসালিন তার চাকরি শুরুতে ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলেন,"আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ট্রেন চালিয়ে মধ্যনগর পর্যন্ত যাব"
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম মজনু বলেন, “এই রেললাইন শুধু যোগাযোগ নয়, এটি হবে আমাদের উন্নয়নের লাইফলাইন। কৃষক, জেলে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী—সবারই উপকার হবে।”
মধ্যনগর বিশ্বেশ্বরী পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ বিজনকুমার তালুকদার বলেন, “রেল যোগাযোগ স্থাপিত হলে শিক্ষার্থীরা ঢাকা-ময়মনসিংহে স্বল্প খরচে যাতায়াত করতে পারবে।”
হাওরাঞ্চলে বর্ষা মৌসুমে সড়ক যোগাযোগ প্রায় অচল হয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রেললাইন থাকলে এ সমস্যা অনেকাংশে লাঘব হবে।
সিলেট শাহপরাণ সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আশিকুর রহমান বলেন, “এই অঞ্চল ভূ-প্রাকৃতিকভাবে রেললাইনের জন্য উপযোগী। মহাসড়কের পাশ দিয়ে কিংবা নদী ও হাওরের মাঝে উঁচু বাঁধ নির্মাণ করে রেলপথ করলে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই যোগাযোগ সম্ভব। তবে পরিবেশের দিকটি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।”
রেললাইন সম্প্রসারণের দাবিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা রেলপথ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও পরিকল্পনা কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল রায় বলেন, “মধ্যনগর পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ হলে হাওড়াঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। পর্যটকরা সহজে ঢাকা থেকে টাঙ্গুয়ার হাওরে আসতে পারবেন, এতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।”
তিনি আরও জানান, “মধ্যনগর পর্যন্ত রেল সম্প্রসারণের বিষয়ে আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি প্রেরণ করব।”
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেনের বক্তব্য জানতে চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি।



























